যে কাজগুলো রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন করে

যে কাজগুলো রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন করে

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা



যে কাজগুলো রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন করে



হারাম খাওয়া
রমজানের সাহরি ও ইফতারে ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ যাবতীয় খরচ নিখুঁত, পবিত্র ও সৎ অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করো। পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে  থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)।
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা থেকে আহার করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)

অবৈধভাবে উপার্জিত খাবার খেয়ে ইবাদত করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে না। ওই ইবাদতের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর : ১৭২৩, তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৬১৪)



টিভি দেখে সময় পার
যেসব কাজ রমজানের বাইরে পাপ ও গুনাহ হিসেবে গণ্য, সেসব কাজ রমজানে করা আরো বেশি মারাত্মক পাপ ও গুনাহ। টিভি দেখা, গান শোনা, মেয়েদের ছবি দেখা প্রতিটি গুনাহের কাজ। তাই এসব থেকে প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের বিরত থাকা উচিত। রমজানের দিনে বা রাতে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া আরো অধিক গুনাহের কাজ।
এগুলো রোজার অন্তর্নিহিত শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। রোজা মাকরুহ হয়ে যায়। দিনে বা রাতে কখনোই ওপরের কাজগুলো করা বৈধ নয়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের মতো আচরণ না করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার ওপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণীদের গান বাজতে থাকবে।’ আল্লাহ তাআলা তাদের জমিনে ধসিয়ে দেবেন এবং তাদের কিছু লোককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২০)

মিথ্যা কথা বলা
রমজানে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকা যেমন জরুরি, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকাও জরুরি। কারণ রোজা থেকে মিথ্যা কথা বলা রোজাকে ধ্বংস করে দেবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করে না, আল্লাহর কাছে তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৭)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা-প্রতারণা ও গুনাহের কাজ ত্যাগ করে না, আল্লাহ তাআলার কাছে তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো মূল্য নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৬২)
তাই পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে এ মাসে কোনো ধরনের মিথ্যা কথা বলা ও কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি।



গিবত ও পরনিন্দা
গিবত (পরনিন্দা) ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১)
পবিত্র রমজান মাসে এই মহাব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।  গিবত শুধু মুখে বলার দ্বারা হয় তা নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও গিবত হয়। গিবত করা ও শোনা দুটিই সমান অপরাধ। জীবিত ও মৃত উভয় ধরনের মানুষের গিবত করা হারাম।
রোজা রেখে অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানোও অনুচিত। পবিত্র কোরআনে মানুষের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ কোরো না এবং পরস্পর গিবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সহুজুরাত, আয়াত : ১২)
তাই পবিত্র রমজান মাসে গিবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা জরুরি।



রাত জেগে গল্প করা
আমরা অনেকেই রমজানের রাতে না ঘুমিয়ে গল্প করে রাত কাটাতে পছন্দ করি। কেউ আবার শপিং করে, রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিয়ে, অনলাইনে সাহরি পর্যন্ত সময় পার করি। যা একেবারেই ঠিক নয়।
রমজান মাস ইবাদতের মাস। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ মাসে যথাসাধ্য ইবাদত করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...।’ (মুসনাদে আহমাদ : হাদিস ৬৬২৬)
তাই এ মাসের প্রতিটি সময় বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া, তাওবা ও নফল নামাজের মাধ্যমে কাটানোর চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক।
তা ছাড়া এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এত বড় ঘোষণা আসার পরও কেউ যদি নিজেকে পাপমুক্ত না করতে পারে, তবে তার মতো হতভাগা আর কে হতে পারে? মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ (জামেউল উসুল, হাদিস : ১৪১০)
নিজে কোরআন পড়া ও একে অন্যকে কোরআন শোনানো রমজানের বিশেষ ইবাদত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন আর রাসুল (সা.) তাঁকে কোরআন শোনাতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৯০২)



সেলফি ও আত্মপ্রদর্শন
অনেকে রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের সময় সেলফি ও আত্মপ্রদর্শন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অথচ সাহরি ও ইফতারের পূর্বমুহূর্ত দোয়া কবুলের সময়। ইফতারের সময়টি রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত। এ দুটি সময় বান্দা তার মহান মনিবের নৈকট্যের আশায় বসে থাকে। এ দুটি সময় আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। তাকে পুরস্কৃত করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ঘোষণা করেন যে রোজা আমার জন্যই, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২)
সাধারণত নিজের কর্মগুলো প্রদর্শনের জন্যই ছবি তোলা হয়, যা অনর্থক কাজ। ইসলাম কোনো অনর্থক কাজই সমর্থন করে না। উপরন্তু প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। কারণ প্রতিটি ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হলো, তা শুধু আল্লাহর জন্যই হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লোকদেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোকদেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৯)
তাই রোজাদারদের এমন কোনো কাজ করা কাম্য নয়, যা তাদের প্রাপ্য বস্তু থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।



স্মার্টফোন আসক্তি
স্মার্টফোন মানুষের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার অপকারিতাও কম নয়। কিন্তু আমাদের সমাজে এর সঠিক ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহার বেশি হয়। অনেকেই স্মার্টফোনের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। যা তার কাজকর্ম, ঘুম, ইবাদত সবকিছুতেই বিরূপ প্রভাব ফেলে।
স্মার্টফোনে হারাম কিছু না দেখলেও এর দ্বারা প্রচুর সময় নষ্ট হয়। অথচ কিয়ামতে মানুষকে প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও স্ব স্থান থেকে নড়তে দেওয়া হবে না। ১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে, ২. যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে, ৩. ধন-সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, ৪. তা কিভাবে ব্যয় করেছে, ৫. সে দ্বিনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কি না। (তিরমিজি : ২৪১৬)
আর যদি রমজানে স্মার্টফোনে রাতভর হারাম ভিডিও দেখা হয়, তাহলে তার পরিণাম হবে আরো ভয়াবহ। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হলো হারাম দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হলো ‘গায়রে মাহরামের  যৌন উদ্দীপক’ কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। জিহ্বার জিনা হলো, ‘গায়রে মাহরামের সঙ্গে সুড়সুড়িমূলক’ কথোপকথন। হাতের জিনা হলো, ‘গায়রে মাহরামকে’ ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হলো, ‘খারাপ উদ্দেশ্যে’ চলা। অন্তর চায় ও কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় ‘যদি জিনা করে’ এবং মিথ্যা পরিণত করে ‘যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে’। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৭)



অহেতুক কথাবার্তা বলা
রমজানে রোজা রেখে অশালীন কথা বলা, গালি দেওয়া নিষেধ। তাই রোজা রেখে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈচৈ না করে।’ ( বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)
রমজানে রোজা রেখে কেউ এ ধরনের কাজে লিপ্ত হলে তার রোজার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। তার সারা দিনের কষ্টই অনর্থক হয়ে যাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বহু রোজাদার এমন রয়েছে, যাদের রোজা দ্বারা পিপাসা ছাড়া আর কোনো লাভ হয় না এবং বহু রাত জেগে নামাজ আদায়কারী আছে, যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কোনো লাভ হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯৬৮৫)
তাই রমজানের দিনগুলোতে কারো সঙ্গে বাগিবতণ্ডায় লিপ্ত হওয়া, কাউকে গালি দেওয়া ও অহেতুক হৈচৈ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমরা অনেকেই রমজানের দিনে সময় কাটানোর জন্য বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই, গল্প করি। তবে মনে রাখতে হবে, রমজানে বন্ধুদের সঙ্গে করা বৈঠকগুলো যেন আল্লাহর স্মরণশূন্য না হয়। কারণ আল্লাহর স্মরণেই রয়েছে সফলতা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৫)



অপচয় ও অপব্যয়
পবিত্র মাহে রমজানে একদম ব্যয়কুণ্ঠতা অবলম্বন করা যেমন উচিত নয়, তেমনি অপব্যয় করাও উচিত নয়।
রমজানে ব্যয় ও খাবারেও সংযম পালন করা জরুরি। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭)
রমজানে আত্মীয়-স্বজন ও গরিব প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রাখা অপরিহার্য। শুধু নিজ পরিবার নিয়ে দামি দামি ইফতার করলেই রোজার পরিপূর্ণ বরকত অর্জন সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬-২৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এবং রোজাদারের সাওয়াবও কমানো হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

অশালীনভাবে চলাফেরা করা
রমজান ও রমজানের বাইরে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার বিধানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। তবে রমজানে এ বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কারণে-অকারণে ঘরের বাইরে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করা জরুরি। অযথা মার্কেটে ও শপিং মলে সময় ব্যয় করা অনুচিত।
নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হলো, ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৩)
সুতরাং মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা বিধানের কোনো বিকল্প নেই।


রোজা রেখে নামাজ না পড়া
কিছু ভাই এমন রয়েছেন, মহান আল্লাহ তাদের রোজা রাখার তাওফিক দান করেছেন। কিন্তু তারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ নামাজও আল্লাহর ফরজ বিধান এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি। আর রমজান মাসে ফরজ নামাজের বাইরে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছে। সুতরাং রমজান মাসে নামাজ না পড়া রমজানের মহিমা ক্ষুণ্ন করে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মুসলমানদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরজ।’ (সুরা নিসা : ১০৩)।
আবু আমর শায়বানী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এ বাড়ির মালিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়?’ তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে সালাত আদায় করা।’ ইবনে মাসউদ (রা.) আবার জিজ্ঞেস করেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন, অতঃপর মাতা-পিতার সদ্ব্যবহার। ইবনে মাসউদ (রা.) আবার জিজ্ঞেস করেন, অতঃপর কোনটি? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহর পথে জিহাদ করা। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এগুলো তো আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরো বেশি জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আরো বলতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২৭)



মাতা-পিতার সঙ্গে অসদাচরণ
শুধু রমজান নয়, কখনো কোনো বিষয়ে মাতা-পিতার সঙ্গে অসদাচরণ করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কোরো না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের ‘উফ’ শব্দটিও বোলো না এবং ধমক দিয়ো না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)
যেহেতু রমজান জান্নাত পুণ্য অর্জনের মৌসুম। তাই এ মাসে যেসব আমলের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যায়, সেগুলো বেশি বেশি করতে হবে। আর যেসব আমল জাহান্নামের যাওয়ার কারণ হবে, সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। মাতা-পিতাও আমাদের জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। তাই পবিত্র রমজানে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। রমজান সম্পর্কিত হাদিসে এসেছে, ‘যে তার মাতা-পিতাকে পেল, অথচ জান্নাত কামাই করে নিতে পারল না, সে ধ্বংস হোক।’ অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলে (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, সন্তানের ওপর মাতা-পিতার হক কী? জবাবে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, তাঁরা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৬২)
কাজেই এই মাহে রমজানে মাতা-পিতার সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে।
Previous Post Next Post