আমাদের জীবনে হাসি, আনন্দ, কষ্ট, ভালো কিংবা খারাপ সময়-এই সবকিছুরই মোকাবিলা করতে হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিক বিভিন্ন কারণে প্রায়ই আমরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকি। এটা আমাদের জীবনের খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু এই মানসিক চাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং অনেকদিন ধরে থাকে তখনই সেটা কিছুটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে মানসিক চাপের পেছনে ঠিক কী কী কারণ জড়িয়ে আছে তা আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। আপনি কি মানসিক চাপে ভুগছেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নিন মানসিক চাপ দূর করে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ ১০টি উপায় সম্পর্কে।
মানসিক চাপ দূর করে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ ১০টি উপায়ঃ
১) মেডিটেশন কিংবা ব্যায়াম
মানুষের অপ্রয়োজনীয় চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে মেডিটেশন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কোনো খোলা পরিবেশে অথবা ছাদে যেয়ে হালকা মেডিটেশন বা ব্যায়াম করুন। সারাদিন বেশ হালকা আর ফুরফুরে লাগবে। শরীর যদি ভালো থাকে, তাহলে মনও ভালো থাকবে। যে কোনো কাজ মন দিয়ে করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, নিয়মিত ব্যায়াম করলে কিন্তু স্কিনও ভালো থাকবে।
২) ছবি আঁকা
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ছবি আঁকার কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো ভাবছেন- আমি তো ছবি আঁকতে পারি না। তাহলে কীভাবে সম্ভব? দেখুন, ইন্টারনেটের এই যুগে পারি না কথাটি অর্থহীন। আর সত্যি কথা বলতে, মন ভালো রাখার জন্য ছবি আঁকতে খুব বেশি শিখতেও হয় না। ছোটবেলায় যা আঁকতেন সেখান থেকেই শুরু করুন। কেমন হলো সেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবার দরকার নেই। রঙ আর পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুঁকি করে সময় কাটালে দেখবেন মনে কোনো দুশ্চিন্তা কাজ করে না। আসল বিষয় হচ্ছে, ইন্টারেস্টিং কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
৩) ডায়েরি লেখার অভ্যাস
হাতে হাতে যখন ফোন আর ডিজিটাল লেখার যন্ত্র, তখন কাগজে কলমে লেখার অভ্যাস অনেকটাই চলে যাচ্ছে আমাদের। কিন্তু এই অভ্যাসটাই যে আপনাকে কতটা প্রশান্তি দেবে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। কোনো কারণে খুব বেশি মন খারাপ লাগলে, কোনো বিষয় আপনাকে কষ্ট দিলে, প্রতিদিনের ছোট বড়, আনন্দ কষ্টের ঘটনাগুলো তারিখ দিয়ে ডায়েরিতে লিখে রাখুন। এটা স্মৃতির মতো কাজ করে। অনেকদিন পর আপনি যখন পুরনো ডায়েরি খুলে পড়বেন, সেটা অন্য রকম ভালো লাগার আবেশ তৈরি করবে, পুরনো অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে। আর ডায়েরি লেখার কারণে মনের ভেতরের চাপ অনেকটাই কমে যায়।
৪) পছন্দের কাজগুলো করুন
সব সময় চাইলেও খারাপ চিন্তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আর ঠিক সে সময়টাই বেছে নিতে হবে আপনার পছন্দের কাজগুলো করে ফেলার জন্য। হতে পারে ছোট বেলায় আপনি গান শিখতেন, আর পরবর্তীতে বড় হওয়ার পর বিভিন্ন কাজের চাপে নিজেকে সেভাবে সময় দেওয়া বা পছন্দের কাজগুলো করা হয় না। তাই আবার নতুন করে গান শেখা বা গান গাওয়া, ঘর গুছানো ইত্যাদি পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন। এতে মাথা থেকে চিন্তা দূর হয়, মন ভালো থাকে।
৫) ভ্রমণ
অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য ঘোরাঘুরি করার কোনো বিকল্প নেই। সাগর পাড়ে হিমেল হাওয়া, চিকচিকে বালি, সবুজ কোনো জায়গা- এর সবই প্রশান্ত করবে আপনার মন। তাই সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়ুন পছন্দের কোনো জায়গায়!
৬) ক্রাফটিং
বাসায় আমরা ফেলে দেই এমন অনেক জিনিস দিয়েই খুব সহজে নানা ধরনের ক্রাফটিং এর কাজ করা যায়। এই যেমন- ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে ডেকোরেশন, পেপার ডাই, পটারি ডিজাইন ইত্যাদি। এই কাজগুলো এতটাই ইন্টারেস্টিং যে একবার আপনি করতে শুরু করলে আর ছাড়তে পারবেন না। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে, মনের দুশ্চিন্তা দূর করতে ক্রাফটিং অসাধারণ একটি উপায়।
৭) বই পড়া
একটা ভালো বই পারে আমাদের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করে ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যেতে। কেননা বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের মনের সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে, ভাবনার নতুন পথ উন্মোচিত হয়। আর আপনার সামনে যখন নতুন এক দুনিয়া খুলে যাবে, তখন দুশ্চিন্তা স্থায়ী হওয়ার খুব বেশি সুযোগ পাবে না।
৮) নতুন রেসিপি রান্না করা
বর্তমান যুগে ছেলে-মেয়ে উভয়েই খুব ভালো রান্না করে। কাজেই মন খারাপ থেকে দূরে থাকতে নতুন নতুন রেসিপিও হতে পারে দারুণ সহায়ক। নিজের হাতে রান্না করা খাবার খেয়ে মন ভালো করাও কিন্তু দারুণ একটি বিষয়।
৯) বাগানে সময় দেওয়া
গবেষণা মতে, বাগান করার কাজে স্ট্রেস কমে, ডিপ্রেশন ও মানসিক চাপের উপসর্গ কমে আসে। এমনকি যারা কোনো শারীরিক বা মানসিক আঘাত, স্ট্রোক, অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য সমস্যা থেকে সেরে উঠেছেন তাদের জন্য বাগান করা খুব সুন্দর একটি কাজ। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার তো হয়ই, একই সাথে সবুজ সুন্দর হয় আপনার চারপাশ।
১০) ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা
আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন স্রষ্টার প্রতি প্রার্থনা আমাদের মনকে শীতল করে, মনে এক অনাবিল প্রশান্তি তৈরি করে। তার কাছে একমাত্র আমরা আমাদের সব কিছু মন খুলে বলতে পারি। এতে আমাদের মন অনেকটাই হালকা মনে হয়।
এই তো জেনে নিলেন, মানসিক চাপ দূর করে মনোযোগ ধরে রাখার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে। এগুলোর মধ্য থেকে যে কাজটি করতে আপনার ভালো লাগে সেটাই করুন। একটা কথা মনে রাখবেন, খারাপ সময় সবার জীবনে থাকে। সেই খারাপ সময়কে সঙ্গে নিয়েই আমাদের হাসতে জানতে হয়, আনন্দ করতে হয়, জীবনের অজানা পথটুকু চলতে হয়। তাই যে কোনো উপায়েই নিজেকে ভালো রাখতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।