আমাদের শরীরের প্রতিটি অংশের চাই সমান গুরুত্ব। বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সব ধরনের অঙ্গই পরিচালিত হয় মস্তিষ্কের মাধ্যমে। মস্তিষ্ক থেকে আসা আদেশ বা তথ্যগুলো মেরুদণ্ডের মধ্যে সংরক্ষিত স্নায়ুরুজ্জু দিয়ে সমস্ত দেহে সঞ্চারিত হয়। মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ঘাড়। তাই ঘাড়ের মাংসপেশি ও হাড়ের সুস্থতার ওপর পুরো দেহের স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভরশীল। ব্যায়ামের অভাব, হাড় ক্ষয়, ক্যালসিয়ামের অভাব, বেশি উঁচু বা বেশি নিচু বালিশে ঘুমানোসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের ঘাড়ে ব্যথা বা টান লাগার মতো সমস্যা হতে পারে। ঘাড়ের মাংসপেশি ও সারভাইকাল কশেরুকার সুস্থতার জন্য প্রতিদিন কিছু সহজ ব্যায়াম অল্প সময়ে করে নেওয়া যায়, যেগুলো যোগব্যায়ামের সূক্ষ্ম ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। এই অভ্যাস সহজে ঘাড়ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যেভাবে করবেন?
মাথা ও মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। শ্বাস টানতে টানতে মাথা পেছনের দিকে যতটা পারেন হেলিয়ে দিন। দম ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন।
শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে থুতনি বুকের সঙ্গে লাগানোর চেষ্টা করুন। দম নেবেন না। এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড থেকে শ্বাস নিতে নিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা ডান দিকে কাত করুন, ডান কাঁধের সঙ্গে ডান কান লাগানোর (যদিও পুরোপুরি লাগানো যাবে না) চেষ্টা করুন, শ্বাস নেবেন না। এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড থেকে শ্বাস নিতে নিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন, একইভাবে বাঁ দিকেও করে নিন। এই প্রক্রিয়াগুলো ৩-৫ সেট করুন।
ডান হাতের পাতাকে ডান দিকে কানের ওপরে দিয়ে মাথার ওপরে আরেক হাত দিয়ে মাথায় চাপ দিন এবং মাথা দিয়ে হাতের দিকে চাপের সৃষ্টি করুন। এই প্রকার হাত দিয়ে মাথা এবং মাথা দিয়ে হাতকে একে অপরের বিরুদ্ধে চাপ দিলে ঘাড়ে এক ধরনের কম্পনের সৃষ্টি হবে। এভাবে চার–পাঁচবার চাপ সৃষ্টি করে বাঁ দিকেও একইভাবে করা উচিত। এটাও ৩–৫ বার করুন।
এবার এক হাত কপালের ওপর রেখে অন্য হাতের পাতাও সেটার ওপর রাখুন। এবার দুই হাত দিয়ে কপালে পেছনের দিকে চাপ দিন এবং একইভাবে মাথা দিয়ে হাতের ওপর চাপ দিন। এই দুই বিপরীতমুখী চাপের ফলে ঘাড়ে কম্পনের সৃষ্টি হবে। এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড থেকে চাপমুক্ত করে দিন। এটা ৩–৫ বার করুন।
এবার হাতের আঙুলগুলোকে পরস্পরের মধ্যে ফাঁসিয়ে নিন। ফাঁসানো হাত দুটিকে মাথার পেছনে নিয়ে গিয়ে মাথায় চাপ প্রয়োগ করুন এবং মাথা দিয়ে বিপরীত দিকে চাপ প্রয়োগ করুন। এবারও কম্পনের সৃষ্টি হবে। এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড থেকে চাপ মুক্ত করে দিন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ৫ মিনিট শবাসনে বিশ্রাম নিন।
বিশেষ সতর্কতা
স্পন্ডিলিস্ট, স্পন্ডিলনস, সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলনস প্রভৃতি মেরুদণ্ডের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়ামগুলো করুন।
রোগাক্রান্ত অবস্থায় মাথা সামনের দিকে বা পেছনের দিকে বেশি চাপ দিয়ে ঝুঁকবেন না।
পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোক শরীরে লাগান, যাতে ভিটামিন ডির অভাব না হয়। ভিটামিন ডির অভাব হলে শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয় না। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে।
নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলো শরীরের লাগানোর অভ্যাস করুন। প্রতিদিন আদর্শ খাদ্যের যে ছয়টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি ঠিকমতো খাচ্ছেন কি না, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। পরিমিত আদর্শ খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামই দিতে পারে সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুখী জীবন।
লেখক: যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক