পুরুষের তুলনায় নারীদের পিঠ ও কোমরব্যথায় বেশি ভুগতে দেখা যায়।
গর্ভকালে অধিকাংশ নারীই পিঠ ও কোমরব্যথায় ভোগেন।
বেশির ভাগ কোমরব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, সন্ধি ও স্নায়ুসম্পর্কিত এটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে হয়। আর কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাঁ পাশে হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডা. মো. রেজাউল করিম আলোচনা করেন পিঠ ও কোমরব্যথার নানা কারণ নিয়ে। তিনি বলেন, পিঠ ও কোমরব্যথা এখন খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। বিশ্বজুড়েই এই সমস্যার রোগী দিন দিন বেড়েই চলছে। বলা চলে জীবনের কোনো না কোনো সময় পিঠ ও কোমরব্যথায় প্রতিটি মানুষকেই ভুগতে হয়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। যেমন গর্ভকালে অধিকাংশ নারীই পিঠ ও কোমরব্যথায় ভোগেন। কারও কারও ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা দীর্ঘ হয়। গর্ভাবস্থায় পিঠ ও কোমরব্যথা হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বাড়ে, ভারী হয়। তাই পেশি ও সন্ধির ওপর চাপ বাড়ে।
প্রসবের কিছুদিন আগে থেকে স্বাভাবিক প্রসবের প্রস্তুতিস্বরূপ রিলাক্সিন হরমোনের প্রভাবে কোমরের স্যাক্রোআইলিয়াক জয়েন্টের লিগামেন্টগুলো শিথিল হয়। এ কারণে ভার বহনের ক্ষমতা কমে যায়। ব্যথা বাড়ে। জরায়ু বড় হওয়ার কারণে মায়ের শরীরের ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হয়, পিঠের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কোমরব্যথার এটিও একটি কারণ। মাতৃত্বকালে স্ট্রেসও কোমরব্যথার কারণ হিসেবে কাজ করে।
আবার ওস্টিওপরোসিস নামের একটি রোগ রয়েছে, যার জন্যও পিঠ ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া যাদের ওজন বেশি, তাদেরও এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে ওজন কমিয়ে ফেলা এবং কিছু হালকা ব্যায়াম করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
এরপর ডা. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনাকালে আমরা অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছি। নানা ধরনের ডিভাইস ও গ্যাজেটের সঙ্গেই আমাদের দিন কাটছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা টানা ক্লাস করছে এবং অনেকে অফিসের কাজ করছে ল্যাপটপ বা মোবাইলে। এর জন্য অনেকে নতুন করে পিঠ ও কোমরব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’
খুব বেশি সময় বা টানা ডিভাইস ও গ্যাজেটের সামনে বসে না থেকে নিয়মিত বিরতি নেওয়া উচিত বলে জানান ডা. মো. রেজাউল করিম। তিনি আরও বলেন, ‘আমদের দেশে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ব্যথার নানা ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকেন। এটি মোটেই উচিত নয়। শুধু তা–ই নয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনকও। কারণ, বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন হেপাটিট ফেইলর বা হেপাটাইটিসের রোগী যদি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল সেবন করেন, তবে তাঁর লিভার ফেল করতে পারে। আবার যাঁদের কিডনির জটিলতা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছারা গ্রহণ করা উচিত নয়।’
ডা. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক রোগীই কোমরব্যথা এবং কিডনিজনিত ব্যথা এক করে ফেলেন বা বুঝতে পারেন না ব্যথার কারণ কী। এতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বেশির ভাগ কোমরব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, সন্ধি ও স্নায়ুসম্পর্কিত এটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে হয়। মেরুদণ্ডের নড়াচড়া, যেমন ওঠাবসা, সামনে ঝোঁকা, হাঁটা বা দাঁড়ানো, অনেকক্ষণ ধরে কাজ করা বা শুয়ে থাকার সঙ্গে এই ব্যথা বাড়ে-কমে। আর কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাঁ পাশে হয়। এটি পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হওয়ার কথা। এই ব্যথা নড়াচড়া করে এবং কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে। এই ব্যথায় শোয়া-বসা বা কোনো কিছুতেই আরাম মেলে না।’
পিঠ ও কোমরব্যথা থেকে পরিত্রাণের জন্য ডা. মো. রেজাউল করিম বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণ কিছু অভ্যাস থেকে পিঠ ও কোমরব্যথা হতে পারে। আমাদের হাঁটা-বসা-ঘুম, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভুল অভ্যাসজনিত অঙ্গভঙ্গি ও ব্যবহৃত সামগ্রী থেকেই এসব সমস্যার সূত্রপাত। নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে মন কার না চায়। অথচ কোমরে ব্যথার জন্য দায়ী নরম বিছানা ও ত্রুটিপূর্ণ শয়নব্যবস্থা। আবার ধরুন, বসার চেয়ার। চেয়ারের ডিজাইন অনেক ক্ষেত্রেই এ ব্যথার জন্য দায়ী। চেয়ার হতে হবে এমন, যাতে আপনার পিঠের স্বাভাবিক বঙ্কিমতা বা বাঁকানো ভাব স্বাভাবিক থাকে। পিঠের কোথাও যেন বিশেষ কোনো অস্বাভাবিক চাপ দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী না হয়। হলে অসুবিধা হবেই। আবার ঘুমানোর ক্ষেত্রে, অনেকেরই কোনো বাছবিচার নেই, কেউ উপুড়, কেউবা হযবরল অবস্থা করে হাত-পা এলোমেলো রেখে ঘুমান। এটা ঠিক নয়। ঘুমানোরও রয়েছে সঠিক অঙ্গভঙ্গি।’